Thursday, February 13, 2014

ল্যাপটপ কেনার আগে জেনে নিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য-প্রযুক্তিতে ভর্তি হবার পর থেকেই ল্যাপটপ এর প্রয়োজনীয়তা টের পাচ্ছি। বছরদুয়েক যাবত আমি আমি আবার না জেনে কিছু কিনি না। কিনার বহু আগে থেকেই ঐ বিষয় নিয়ে লেখাপড়া শুরু করে দেই (যদি ক্লাসের পড়াগুলা এরকমভাবে পড়তাম ????) এতে লাভ বৈকি লস হয়না।তাছাড়া, অনেক সময় একেকজন একেক সমস্যা নিয়ে আসতো। সবতো আর আমি জানি না, তখন শুরু হত খোঁজাখুঁজি, এতে দেখা গেছে আমার জানার পরিমাণটাও একটু বাড়ত।
বর্তমান যুগের ইন্টারনেট এর কল্যানে আমাকে আর পায় কে ? ল্যাপটপ বিষয়ে কিছু না বুঝলেই গুগলে সার্চ। অল্পস্বল্প অভিজ্ঞতা আর ইন্টারনেট এর কল্যানে আমি আজ ল্যাপটপ কিনার ব্যাপারে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করব।
ল্যাপটপ কিনার আগে যে জিনিসটি সবার আগে আসে তা হলঃ বাজেট।
চাইলেই তো হবেনা, সাধের সাথে সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। আগেই ঠিক করুন আপনি কত টাকা খরচ করে ল্যাপটপ কিনবেন, না হলে দেখা যাবে আপনি বুঝতেই পারবেননা আপনার কোনটি কিনা উচিত। বরঞ্চ, দেখা যাবে আপনি আপনার সাধ্যের বাইরে গিয়ে চিন্তা করছেন।

২য় যে জিনিসটি আসে, তা হলঃ আপনার
প্রয়োজনীয়তা।
ধরুন, আপনি নেট ব্রাউস কিংবা, মুভি দেখার জন্য একটি ল্যাপটপ কিনবেন । বাজেট কোন ব্যাপার না। আপনি কি Core i7 ল্যাপটপ কিনবেন নাকি Dual core কিনবেন ?dual core এখন আর কেউ কেনে নাকি ? আচ্ছা মানলাম, তাহলে একটা Core i3 ল্যাপটপই কিনুন (Core i3 কিন্তু গঠনগত দিক থেকে ডুয়েল কোরই)। বরং আপনার যদি বাজেট বেশিই থাকে তাহলে আপনি অন্যান্য ব্যাপারগুলো দেখতে পারেন, যেমনঃ টাচ-মনিটর কিংবা, ল্যাপটপটির ওজন কেমন ইত্যাদি আরকি।
গ্রাফিক্স এর কাজ করলে কিংবা হাই কোয়ালিটি গেমস খেলতে চাইলে অবশ্যই উচ্চমানের ল্যাপটপ কিনতে হবে(যেমনঃ Core i5/Core i7 এবং অন্ততপক্ষে ১ জিবি ভালমানের গ্রাফিক্স কার্ড)যদিও,এসব কাজের জন্য ডেস্কটপই সেরা।
ল্যাপটপের কনফিগার নিয়ে কথা বলতে গেলে যে যে জিনিসগুলো আসেঃ
০১. প্রসেসরঃ

অবশ্যই ভালো মানের প্রসেসর কিনা উচিত। এ বিসয়টি একটু আগে উল্লেখ করেছি। তবে
একটি কথা, আমার মতে সাধারন কাজের জন্য core i3 কিংবা সমমানের প্রসেসরই নেয়া উচিত। আরেকটা জিনিস, আপনি যদি ইন্টেল এর প্রসেসর নিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই লক্ষ করবেন, তা কোন জেনারেশন এর ? এই মুহুর্তে আমি বলব, অবশ্যই 3rd জেনারেশন কিংবা ৩য় প্রজন্ম। বাজেটের কারনে ২য় প্রজন্ম নিলেও সমস্যা নেই। ৪র্থ প্রজন্ম নিলে তো কথাই নেই।
০২. র‍্যামঃ

প্রসেসর এর প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় এ ব্যাপারটি লক্ষ করিনা। যদিও সাধারন মানের ল্যাপটপেও এখন ২ জিবি র‍্যাম থাকে তথাপি, ৩-৪ জিবি থাকা ভালো। র‍্যাম এর ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি লক্ষণীয় তা হল, র‍্যামটি কি DDR2 নাকি, DDR3 ? DDR2 এর চাইতে DDR3 ভালো। আরেকটা জিনিস, র‍্যামের বাসস্পিড কত? ১৩৩৩ নাকি ১৬০০। ১৬০০ হলে ভালো যদিও ১৩৩৩ও খারাপ না।আর, ভবিষ্যতে র‍্যাম বাঁড়াতে পারবেন নাকি ? অর্থাৎ র‍্যাম স্লট কয়টা? ২ টা হলে ভালো।
০৩. স্টোরেজ ড্রাইভঃ

আমাদের দেশে নেট এর যা অবস্থা, তাতে হার্ডডিস্ক একটু বড় কেনাই ভালো। আমরা তো আর চাইলেই সব ফাইল নেট এ জমা রাখতে পারিনা, কিংবাইউটিউব থেকে এইচডি ভিডিও দেখতে পারিনা। তার উপর আছে মুভি/মিউজিক, সফটওয়্যারের ব্যাক-আপ ফাইল ইত্যাদি। অনন্ত পক্ষে ৫০০জিবি হতে হবে আপনার হার্ডডিস্ক।তাছাড়া যে জিনিসটা লক্ষ রাখবেন তা হল, হার্ডডিস্ক এর আরপিএম কত। ৫৪০০ এর চাইতে ৭২০০ আরপিএম ভালো। যারা উচ্চমানের ল্যাপটপের চিন্তা করছেন তারা সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD) এর কথা মাথায় রাখবেন।
০৪.গ্রাফিক্সঃ

আপনার গ্রাফিক্স কি, ইন্টিগ্রেটেড নাকি, ডেডিকেটেড, কোনটি হবে ? যদি উচ্চমানের ভিডিও দেখেন কিংবা হাই কোয়ালিটি গেমস খেলেন অথবা গ্রাফিক্স এর কাজ করেন,তাহলে অবশ্যই ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স নেবেন নচেৎ, ইন্টেল এইচডি ৪০০০ কিংবা ৩০০০ ই যথেষ্ট। আরেকটা জিনিস লক্ষ রাখবেন, উচ্চ মানের গ্রাফিক্স মানেই বেশি পাওয়ার লস আর বেশি তাপমাত্রা উৎপন্ন হওয়া। তাই,কারেন্ট চলে গেলে দুশ্চিন্তার একটা বিষয় আছে। পাশাপাশি বেশি তাপমাত্রা যাতে না হয় সেজন্য কুলার ব্যবহার করতে পারেন। এখন অবশ্য ডুয়েল গ্রাফিক্স এর ল্যাপটপ পাওয়া যায়। আপনি যখন যে গ্রাফিক্স(ইন্টেল এইচডি অথবা, ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স) চাইবেন সেটা ব্যবহার করতে পারবেন।
০৫. ডিসপ্লেঃ

আপনার ডিসপ্লে কতবড় হবে? আপনি মুভি দেখলে ১৫.৪” নিতে পারেন কিন্তু, যদি পরিবহনের সুবিধা চিন্তা করেন তাহলে ১৪” ই ভালো হবে। ডিসপ্লে কি এলসিডি নাকি, এলইডি? অবশ্যই এলইডি হলে ভালো। রেজোলিউশান ? যত বেশি হবে তত ভালো । ক্ষেত্র বিশেষে আপনি আরও বড় স্ক্রীনও পাবেন মার্কেটে।
০৬. ব্যাটারিঃ

ব্যাটারি কতক্ষন ব্যাকাপ দেয়, সেটা খুবই গুরুত্বপুর্ন। কিনার আগে জেনে নিন, কতক্ষণ ব্যাক-আপ পাবেন।সাধারনত ৬ সেলের ও ৪ সেলের ব্যাটারি পাওয়া যায়। তাছাড়া ৮ সেল ও ৩ সেলের ব্যাটারিও আছে।
মোবাইল এর ব্যাটারির মত ল্যাপটপ এর ব্যাটারিতেও mAh(মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) অথবা Ah(অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) লেখা থাকে যা দ্বারা ব্যাটারির ক্ষমতা বুঝা যায়।
০৭. ওয়েবক্যামঃ
আমরা হয়ত এ জিনিসটি খেয়াল ই করিনা। কিন্তু এখন করতে হবে। যারা, ভিডিও চ্যাট করেন তারা যদি ভালো ওয়েবক্যামসহ ল্যাপটপ কিনেন তাহলে, অপরপ্রান্তে আপনার ভালো মানের ভিডিও দেখা যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নেটের স্পিড খুব গুরুত্বপুর্ন একটা জিনিস। চিন্তা নেই, অচিরেই ৩জি এসে যাচ্ছে। কিনার আগেই জেনে নিন, কত মেগা-পিক্সেল আর এইচডি সাপোর্ট করে কিনা। পাশাপাশি অল্প আলোতে কেমন কাজ করে সেটা লক্ষ করুন।
০৮. অন্যান্যঃ

ওয়াইফাই এবং ব্লু-টুথ আছে কিনা জানুন। থাকলে কোন ভার্সন এর তা জেনে নিন। HDMI পোর্ট থাকলে এক্সটার্নাল মনিটরে এইচডি মুভি ও গেমস উপভোগ করে মজা পাবেন। ইউএসবি ভার্সন কত জেনে নিন । এখন তো বেশিরভাগ ল্যাপটপেই ইউএসবি৩.০ সাপোর্ট করে। তাছাড়া, সাউন্ড কোয়ালিটি কেমন, অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ(ডিভিডি /ব্লু রে) এগুলাও লক্ষ করতে পারেন।
একটি ভালমানুষের যেমন অনেকদিক দিয়েই ভালো গুন থাকে তেমনি, একটি উচ্চমানের ল্যাপটপ হল, সবদিক দিয়েই উচ্চমানের। শুধু উচ্চমানের প্রসেসর হলেই ল্যাপটপ অনেক স্পিডি হয়ে যাবেনা, তার সাথে অন্যান্য জিনিস (র‍্যাম, জিপিইউ, স্টোরেজ ড্রাইভ ইত্যাদি) এগুলাও সামঞ্জস্যপুর্ন হতে হবে। তাই শুধু core i5 কিংবা Core i7 দিয়ে ল্যাপটপের বিচার করবেন না। সবদিক দিয়েই ভালো হলেই আপনার ল্যাপটপ একটি ভালো ল্যাপটপ হবে।
ল্যাপটপের কনফিগার তো করলেন, এখন কোন ব্র্যান্ড কিনবেন ? (এ ব্যাপারটি অনেক লেখকই এড়িয়ে যান)পাশাপাশি আরেকটা জিনিস আসে তা হল, দেশ থেকে কিনবেন নাকি, পরিচিতদের(যাদের আছে) মাধ্যমে উন্নত দেশ থেকে আনাবেন ?
ব্র্যান্ডের কথায় পরে আসি, আগে দেশ না বিদেশ বলে নেই। অনেকের মতে একই মডেলের ল্যাপটপ বাংলাদেশের চাইতে ইউরোপ/আমেরিকারটা ভালো। আমি ঠিক জানিনা, তবে আমার মনে হয় কথাটি সত্য।
তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, বিদেশ থেকে ল্যাপটপ আনালে কোন প্রব্লেম হলে সেটার ওয়ারেন্টি এ দেশে পেতে পারেন কিনা, আগে থেকে সেটা নিশ্চিত হউন।
আবার দেশের সবই যে খারাপ তা কিন্তু নয়, বরং, অনেক সময় আমরা নকল ল্যাপটপ কিনে ফেলি। কিংবা, নিম্ন দামের কারনে, কোয়ালিটিও খারাপ হয়। ভালভাবে বুঝে-শুনে কিনলে নিতান্ত দুর্ভাগা না হলে ল্যাপটপ অনেক দিনই যায়।
আমি সাধারনত বলব, আপনি যদি আমার মত অল্প কিংবা মোটামুটি বাজেটের ল্যাপটপ কিনেন তাহলে, দেশ থেকেই কিনতে পারেন তবে, যদি উচ্চমানের কিংবা বেশিদামের ল্যাপটপ কেনার ইচ্চা থাকে তাহলে বাইরে থেকে আনাতে পারেন।
ব্র্যান্ড:

এ ব্যাপারটি অনেকগুলা বিষয়ের উপর নির্ভর করেঃ
কোম্পানির বর্তমান পন্যের গুনগত মান কেমন ?
আপনার আশেপাশে পরিচিতরা ঐ কোম্পানির পন্য ব্যবহার করে কেমন সার্ভিস পাচ্ছে ?
কোম্পানির ব্যবসায়িক সুনাম কেমন ?
ঐ কোম্পানির ল্যাপটপ ব্যতীত অন্য কোন পন্য কি আপনি ব্যবহার করেছেন ? করলে কেমন সার্ভিস পেয়েছেন ?
ঐ কোম্পানির পন্যের ওয়াররেন্তি কি ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যায় ?
ল্যাপটপের কোন অংশ নষ্ট হলে কি, তা বাজারে সহজে পাওয়া যাবে ?
অতিরিক্ত গরম হয় কি ?
ঐ কোম্পানির আগের ল্যাপ্তপগুলার চাইতে বর্তমান ল্যাপটপ গুলা দেখলে ভালো ফিনিশিং মনে হয় কি ?
দাম কি অতিরিক্ত কম মনে হচ্ছে ?
ধরুন আপনি একটি কোম্পানি ঠিক করলেন যাদের আগে খুব সুনাম ছিল, কিন্তু এখন অনেকেই বলছে এই কোম্পানিটি ভালো না। যারা বলে তারা যদি আপনার কাছে বিশ্বস্ত হয়ে থাকে তাহলে আপনি ঐ কোম্পানিটি বর্জন করুন ।
এবার আপনি, অন্য আরেকটি ব্র্যান্ড ঠিক করলেন, এটি এম্নিতে ভালই তবে, দাম অনেক কম মনে হয়, তাহলে “ডালমে কুচ কালা হ্যায়”
ওয়াররেন্তি কি পাওয়া যাবে ? হ্যা যাবে। তাহলে দেখুন কত বছর ? ১ বছর না হয়ে ২ কিংবা ৩ বছর হলে কি ভালো হয় না ?
এই কোম্পানির অন্যান্য পন্য ভালই কিন্তু ল্যাপটপ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আস্থা রাখা যেতে পারে।
ভাই কোন ব্র্যান্ডের নামতো বললেন না ?
ভাই, আমাকে যদি বলতেই বলেন তাহলে বলব, আপনার আমার পরিচিত যে ব্রান্ডটি বাজারে সুলভ সেটি আপনি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন । লক্ষ রাখবেন আপনি যেন নকল কিনে প্রতারিত না হন এবং ভাল দোকান থেকে কিনুন।
তাছাড়া আরও একটি ব্যাপার হল অনেক সময়, কিছু ব্র্যান্ড বাজার দখলের জন্য অনেক সময় কম দাম ও বেশি ওয়ারেন্টি দেয়, সেক্ষেত্রে উল্টা ভেবে বসবেন না যেন।
ব্র্যান্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা যে ভুলটি প্রায়ই করে থাকি টা হল, আশে-পাশের মানুষের কান কথা। যারা ল্যাপটপ কিংবা এ জাতীয় পন্য সম্পর্কে ভালো জানেন তাদের সাথে আলোচনা করুন, বাকিদের এড়িয়ে চলুন।কেউ যদি নির্দিষ্ট কোন ব্র্যান্ডের নাম বলে কিংবা ঐ ব্র্যান্ড এর ল্যাপটপ কিনতে নিষেধ করে তাহলে তাকে সুনির্দিষ্ট কারন উল্লেখ করতে বলুন ।
ধরুন, ২ বছর আগে যারা ‘ক’ ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনেছিল তারা ভালই আছে, এখন আপনি কিনার সময় ২ বছর আগের ‘ক’ আর এখনকার ‘ক’ কেমন সেটা তুলনা করে মিলিয়ে নিন।
আমাদের একটা বদনাম আছেঃ “হুজুগে বাঙালি”।
কে কি বলল , সেটা উড়িয়েও দিবেন না আবার, ঐ কথার ভিত্তি ধরে তুলকালাম কান্ড করবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় সবার মতামত শুনুন তারপর তার কথা ভালভাবে যাচাই করে সিন্ধান্ত নিন। এক্ষেত্রে, হাতের কাছে ইন্টারনেট থাকলে আপনি তাদের কথার সত্যতা যাচাই করুন।
ব্র্যান্ড বাছাইয়ের জন্য আরও একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হলঃ
বাজারে একাধিক ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ আছে যেগুলা ভালো। আবার ভালো ব্র্যান্ডের কোন ল্যাপটপের সবগুলা মডেলই ভালোনা। কিছু কিছু মডেল খুবই বাজে করে। ধরুন, ‘ক’ ব্র্যান্ডের XX মডেলটি খুবই ভালো, তারমানে এই না যে, ঐ ব্র্যান্ডের YY মডেলটি খুব ভালো হবে (অবশ্য খারাপ যে হবে তাও বলা যায় না )। তারচেয়ে বরং আপনি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন।
বাজারে একটি নতুন ব্র্যান্ড আসছে, ওদের প্রোডাক্ট আপাত ভালো মনে হচ্ছে কিন্তু আপনি কনফিউসড, ধীরে ধীরে সুস্থে আগান। তাড়াহুড়া করবেন না ভুলেও। একটু সময় নিন, আপনিই বুঝতে পারবেন ঐ প্রোডাক্ট কিনবেন কি কিনবেন না। পাশাপাশি এটাও বুঝতে পারবেন কেন কিনবেন কিংবা কেন কিনবেন না(এটা জানা খুবই জরুরি)।
এই ব্যাপারটি ভালো কোন ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তাড়াহুড়া করবেন না। সবুরের ফল মিষ্টি হয়।
বাজারে কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলা মার্কেটে খুবই চলছে, বেশি কনফিউসড থাকলে ঐ মডেলগুলা কিনতে পারেন।
ওয়ারেন্টি ১/২/৩ বছর যাই হোক না কেন, আপনার মুল দুশ্চিন্তা শুরু হবে ওয়ারেন্টি শেষ হবার পর। যদি প্রচলিত কোন ব্র্যান্ডের পন্য কিনেন তাহলে, কোন পার্টস নষ্ট হলে আপনাকে তেমন একটা বেগ পেতে হবেনা। কিন্তু, আপনি যদি একেবারেই অপ্রচলিত কোন ব্র্যান্ডের পন্য কিনেন তাহলে, পার্টস পেতে আপনার ভোগান্তি হতে পারে।
সবশেষে যে কথাটি স্মরণ রাখা উচিত টা হলঃ আপনি যে প্রোডাক্টই কিনুন না কেন, এত কিছু মাথায় রেখে ল্যাপটপ কিনার উদ্দেশ্য একটাই, কেউ যেন বেশি দাম দিয়ে বাজে ল্যাপটপ না কিনে কিংবা, প্রতারিত না হয়।
যতই সাবধান থাকি না কেন, আমরা চাইলেই একটা ভালো ল্যাপটপ পানির দামে কিনতে পারব না।
কেউই আপনাকে অযথা কমদামে কিছু দিবে না। মোটামুটি একই কনফিগারেশন এর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কাছাকাছি দামেই হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবধান হয়ত ১০০০-৫০০০ টাকা হবে (সনি ভায়ো কিংবা অ্যাপল ব্যতিক্রম) তাই, কমদামে অনেক ভালো জিনিস কিনে ফেলব এরকম ধারনা বোকামি। বরং, এই পোস্ট এর উদ্দেশ্য আপনি কিভাবে আপনার বাজেট এবং প্রয়োজন অনুসারে বেস্ট পন্যটি কিনতে পারেন।
এতক্ষনতো অনেক জ্ঞান দিলাম, এবার আমাকে জ্ঞান দেবার পালা আপনাদের,
এখন আসি আমার কথায়, আমি কোনটি কিনবোঃ(এই অংশটি আমার ব্যক্তিগত মতামত কিংবা, সিন্ধান্ত বলতে পারেন)
আমি IT তে Bsc. পড়ছি, প্রোগ্রামিং করা লাগে,PDF পরি, তাছাড়া নেট ছাড়া চলব কিভাবে? মাঝে মাঝে ২-১ টা মুভি তো দেখি। গান না শুনলে তো মেজাজ ভালো থাকেনা।গেমস(PES 13, NFS) না খেললে তো জীবনই বৃথা। ও!!!! এদিকে আবার Skypeতে তো নিয়মিত কথা বলি। phptoshop, dreamweaver ছাড়া কি চলে ? উচ্চ মানের গ্রাফিক্স আমার দরকার নেই।
সবকিছু মিলিয়ে আমার বাজেট ৪০০০০ টাকা। নুন্যতম কনফিগার হবে, Core i3 কিংবা AMD dual core, ৪জিবি র‍্যাম, ইন্টেল এইচডি ৪০০০ কিংবা, AMD redeon 512 MB গ্রাফিক্স মেমোরি, ১.৩ মেগাপিক্সেল ওয়েবক্যাম , ৫০০ জিবি হার্ডডিস্ক, ২.৫ ঘণ্টা ব্যাক-আপ।
আমি হয় Gigabyte কিংবা Samgsung কিনতে ইচ্ছুক।
গিগাবাইট ও আসুস কিনার পক্ষে যুক্তি হল, এগুলার মাদারবোর্ড বাজারে ভালই সুনাম অর্জন করেছে। সে হিসেবে ল্যাপটপ খারাপ হবে না আশা করি। ২টা ব্র্যান্ডএর বেশিরভাগ ল্যাপটপেই ২ বছর ওয়ারেন্টি। তার মানে ২ বছর নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।
HP & Toshiba আমার কাছে ব্র্যান্ড হিসেবে খুব ভালো মনে হয়।
অনেকে ডেল এর কথা বলবেন, ইদানিং কেন জানি ডেল এর ল্যাপটপ আমার পছন্দ হচ্ছে না।
Sony, Apple এর দাম অনেক বেশি। আমার সাধ্যের বাইরে।
লেনোভো কিংবা ফুজিতসু ভালো ব্র্যান্ড হলেও আমার পছন্দ হয়নি।
এছাড়া, বাজারে অপ্রচলিত আরো কিছু ব্র্যান্ড আছে। ভালো ধারনা না থাকলে সেগুলা না কিনাই ভালো।
ও আরেকটা কথা স্যামসাঙ এর একটি ল্যাপটপ দেখে খুব মনে ধরে গেল, এই পোস্ট লেখার এক ফাকে হঠাৎ চোখে পরল ল্যাপটপটা(নিচে দেখুনঃ ০৬ নং)।
দাম অনুযায়ী আমার টার্গেটে থাকা ল্যাপটপ গুলা হলঃ

০১. HP 2000-2d29 Core i3 3110M ৩৭,৮৭০০টাকা
০২. Asus X450CA Core i3 3217U 14 Inch ৩৮,০০০ টাকা
০৩. Fujitsu LH532 Core i3 3120M ৩৯,৮০০টাকা
০৪. HP Pavilion G4-2219TU Core i3 3110M Black ৩৯,৮০০টাকা
০৫. Gigabyte Q2440 Core i3 3120M ৪১,০০০টাকা (এটির কনফিগার, দাম, ২বছর ওয়ারেন্টি এইসব কারনে এটি আমার পছন্দ)
০৬. Samsung NP370R4V-A04BD Core i3 3120 ৪২,০০০টাকা(স্টাইলিশ, হাল্কা ও ভালো ব্র্যান্ড এই কারনে এটি আমার পছন্দ,প্রথম দেখাতেই আমি এর প্রেমে পরে গেছি, এখনো সামনাসামনি দেখিনি, হয়ত এটিই কিনতে পারি)
কিভাবে কিনবো ? কোথায় থেকে কিনবো ?

আপনি যদি ঢাকা কিংবা এর আশেপাশের জেলাগুলোতে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে IDB মার্কেট। আর যদি অবস্থা এমন হয় যে ঢাকা থেকে কিনা সুবিধাজনক নয় তাহলে, আপনি ভালো কোন শো-রুম কিংবা দোকান থেকে কিনুন। এ ক্ষেত্রে আগে যারা কিনেছেন তারা তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে কোথায় থেকে কিনলে ভালো হবে।যেখান থেকেই কিনুন না কেন আপনি গেলেন আর কিনে নিয়ে চলে আসলেন তা যেন না হয়, আমার পরামর্শ হবে আগে নেট থেকে দাম সম্পর্কে ধারনা নিন। যতটুকু জানি নেট এ দেয়া দামের চাইতে কিছু কমেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন। যতটা সম্ভব যাচাই করুন, ল্যাপটপ দেখুন , দাম জানুন। সবকিছু জেনে বুঝে তারপরে সঠিক ল্যাপটপটি কিনুন।
এক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়, বিক্রেতা যেমন খারাপ আছে তেমন ভালও আছে। অনেক সময় এক বিক্রেতা পাশের দোকানের নামে আপনার কাছে বদনাম বলবে। তাদের কথায় তালগোল পাকাবেন না। এটা একটা ব্যবসায়িক কৌশল মাত্র।
মার্কেটে যে জিনিসটা নতুন সে সম্পর্কে অনেকে(সবাই না, কেউ কেউ হয়ত) আপনাকে ভুল তথ্য দিবে (যেমনঃ এই ল্যাপটপ (অন্য শো-রুমের বিক্রেতা) সম্পর্কে বিক্রেতা আমাকে বলেছে যে এটাতে গ্রাফিক্স কার্ড আছে, কিন্তু AMD সম্পর্কে আগে থেকে খানিকটা ধারনা থাকায় আমি জানতাম যে এটা কিছুটা ভালো গ্রাফিক্স এর ল্যাপটপ হলেও এটা বিল্ট ইন গ্রাফিক্স ই, ডিসক্রিট না।) এ ব্যাপারে সাবধান হউন।
কেনার সময় ল্যাপ্তপ-কম্পিউটার সম্পর্কে আপনার চাইতে ভালো ধারনা রাখে এমন কাউকে সাথে রাখলে ভালো হয়।
ল্যাপটপ তো কিনেই ফেললেন, তারপর ?

তারপর আবার কি ? জি ভাই তারপরও কিছু আছে। ল্যাপটপ কিনলেন এখন মিষ্টিটা সময়মত আমাকে পৌছিয়ে দিয়েন।
যে ব্যাপারটা আমাদের কাছে সবচেয়ে কম গুরুত্ব পায় সেটা হল ল্যাপটপের যত্ন। বাইরে থেকে যতই চকচক করুক না কেন দিন দিন আপনার ল্যাপটপের ভিতর জমা হবে ধুলা-বালি… এর ফলে ল্যাপটপ দ্রুত গরম হবে। কার্যক্ষমতা কমে যাবে। এখন উপায়? আগে থেকেই চেষ্টা করুন যাতে ধুলাবালি কম লাগে। এজন্য একটি কুলার কিনে ফেলতে পারেন খুব সহজেই। অল্প দামেই একটা কুলার পেয়ে যাবেন যা আপনার ল্যাপতপকে কিছুটা ভালো রাখবে। এটে ল্যাপটপ অনেকদিন ভালো থাকবে। কুলার কিনার প্রধান কারন, আমরা আমজনতারা বালিশ-খাট-বিছানা ইত্তাদির উপর ল্যাপটপ চালাতে খুব ভালবাসি, যা কিনা ল্যাপটপএর বারোটা বাজিয়ে দেয়। তাছাড়া আপনি যদি গেমস খেলেন কিংবা দীর্ঘক্ষন ল্যাপটপ চালান তাহলে কুলারতো আপনার জন্য ফরজ।
আপনি যদি অফিস-দোকান কিংবা পাবলিক প্লেস এ আপনার ল্যাপটপটি ব্যবহার করেন তাহলে, একটি ভালো মানের লক কিনে নিন।
আর চেষ্টা করুন মাউস ব্যবহার করতে, এতে টাচপ্যাডের উপর চাপ কমবে।সেজন্য একটি মাউস কিনে নেন। টাইপিং এর কাজ করলে একটা কিবোর্ডও নিয়ে নিন ।

No comments:

Post a Comment